আবদুল হাই শিকদার
a_hyesikder@yahoo.com
আমি আমার অনেক লেখায় বলেছি, গত ৩২ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কম করেও ৩২ হাজার বার শিষ্টাচারবর্জিত ভাষায় জিয়াউর রহমানের ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন। তার দেখাদেখি তার দলের পাতিপুতি খুচরা আধুলি সিকি নেতারাও যাচ্ছেতাই ভাষায় এই জাতীয় নেতাকে বাপ-বাপান্ত করে গালাগাল করেছেন।
বাংলাদেশের পাঠ্যবই থেকে, স্থান ও স্থাপনা থেকে তার নাম মুছে ফেলার জন্য চালানো হয়েছে হৃদয়হীন বুলডোজার।
এমনকি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা দীলিপ বড়ুয়াও খুঁটির জোরে পাঁঠার মতো কুঁদছেন।
আমাদের জাতীয় নেতারা তাদের সব সীমাবদ্ধতা নিয়েই আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ মানুষ। তারা অবশ্যই আমাদের শ্রদ্ধেয়। সম্মানের। তাদের কারও সঙ্গে কারও তুলনা করা ঠিক নয়। তাদের ছোট করাও ঠিক নয়। তারপরও অজ্ঞ, মূর্খ ও অন্ধরা হারিয়ে ফেলে কাণ্ডজ্ঞান। এই কাণ্ডজ্ঞানহীনদের জন্যই দু’চারটা কথা বলতে হয়।
শেখ মুজিব নিহত হলেন নির্মমভাবে সপরিবারে, তার দলের লোকদের হাতে। সেদিন নেতার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রেখে আওয়ামী লীগের নেতারা ছুটলেন মন্ত্রিত্বের শপথ নিতে। স্পিকার আবদুল মালেক উকিল বললেন, বাংলার ফেরাউন শেষ হয়ে গেছে।
অন্যান্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা ছিলেন তারা ঢুকে পড়েছিলেন গর্তে। একটা সামান্য প্রতিবাদ মিছিল করার জন্যও সারা দেশে কোথাও কাউকে পাওয়া যায়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি প্রতিবিধানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যদিও সফল হননি।
আমরা তার সেদিনের পদক্ষেপের সঙ্গে একমত হই আর না হই, কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায়, সেদিন প্রমাণিত হয়েছিল একমাত্র তিনিই ছিলেন সত্যিকারের মুজিবপ্রেমিক। অবাক হওয়ার বিষয়, তার সেদিনের সেই আত্মত্যাগের সামান্য মূল্যায়নও আজকের প্রধানমন্ত্রী করেননি।
পরিতাপের বিষয়, শেখ মুজিবের দাফন হয়েছিল অত্যন্ত দীনহীনভাবে। অথচ তখন ক্ষমতায় তারই অনুসারীরা।
অন্যদিকে জিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ঘটেছিল উল্টো ঘটনা। মানিক মিয়া এভিনিউতে তার যে জানাজা হয়, তার তুলনা সমকালীন বিশ্বে বিরল। সেদিন যেন একটা লাশের পাশে ভেঙে পড়েছিল সারা দেশ। এ ব্যাপারে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে সেদিনের গণতন্ত্রী পার্টির নেতা আজকের আওয়ামী নেতা ও দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘৩০ মে থেকে ৩ জুন যে লাখ লাখ জনতা শুধু ঢাকা মহানগরীতেই নয়, গোটা বাংলাদেশে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছে, তার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি (জিয়াউর রহমান) বাংলাদেশের মানুষের কত কাছাকাছি এবং প্রাণপ্রিয় ছিলেন। এটা বলতে যদি কেউ কুণ্ঠাবোধ করেন, এটা তার মানসিক দৈন্য এবং তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব বলে আমি মনে করি। এই যে লাখ লাখ জনতার স্রোত, কেন এসেছিল এই লাশটির পাশে, কেন এসেছিল জানাজায় ও গায়েবি জানাজায়? এসেছিল একটিমাত্র কারণে—সাবেক রাষ্ট্রপতির সততার প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জানাতে।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেদিন আরও অনেক কথা বলেছিলেন। যার কিছুটা সারাংশ হলো, আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলে এসেছি, তা জিয়ার মাধ্যমে সংবিধানে গৃহীত হয়েছে। তার জন্যই মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা আমরা সংবিধানে রাখতে পেরেছি। আমি নিজে যে পার্লামেন্টে এসেছি, তাও জিয়ার জন্য।
‘... মুক্তিযুদ্ধের যে প্রতিশ্রুতি, ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা যে অঙ্গীকার—আজকে মরহুম জিয়াউর রহমান পালন করে যাননি যদি কেউ বলেন, তাহলে সত্যের অপলাপ হবে।’ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। স্টাবলিশমেন্টকে নষ্ট করার জন্য। দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার জন্য। এতে লাভবান হয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র, লাভবান হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি, লাভবান হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলার জনগণ, দুঃখী মানুষ, দেশের আপামর জনগণ।
এ তো ঢাকার কথা। এবার আসি খোদ চট্টগ্রামের কথায়। যেখানে জেনারেল মঞ্জুরের বাহিনী তাকে হত্যা করে দখলে নিয়েছিল শহর, সে সময় প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে ঢাকা থেকে হাতেগোনা যে এক-দুইজন সাংবাদিক ছুটে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে সরেজমিন রিপোর্ট করার জন্য, তাদের প্রধানতম নাম খন্দকার হাসনাত করিম। তার সঙ্গী ছিলেন ফটো সাংবাদিক শামসুদ্দীন চারু। তারা সার্কিট হাউস থেকে শুরু করে রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় জিয়ার প্রথম কবরস্থান, মঞ্জুরের পলায়ন ও ধরা পড়াসহ প্রতিটি পদক্ষেপও মুহূর্তের সঠিক অনুসরণ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তৈরি করেন ‘সচিত্র স্বদেশ শহীদ জিয়া অ্যালবাম’। জিয়ার শাহাদাতের পর সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম। সচিত্র স্বদেশের সম্পাদক ছিলেন জাকিউদ্দিন আহমদ ও আজকের বিএনপির এমপি মোশাররফ হোসেন।
সেদিনের চট্টগ্রামকে জানার জন্য খন্দকার হাসনাত করিমের প্রতিবেদনের সামান্য অংশ তুলে দিচ্ছি—“প্রেসিডেন্ট জিয়া ছিলেন পতেঙ্গা সমুদ্রতটে আছড়েপড়া বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গের মতো প্রাণচঞ্চল। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’তে আরও কিছু শস্য ঢেলে দিয়ে ঝুড়িটার তলা মেরামত করতে চেয়েছিলেন তিনি। দেশময় জাগিয়ে তুলেছিলেন কর্মোদ্যম এবং কর্মযোগের এক জাগরণ। কাজ কাজ আর কাজ—এই ছিল তার আহ্বান।...
সাধারণ মানুষও তাদের নেতাকে শেষ সম্ভাষণ জানাতে ভোলেনি। চট্টগ্রাম নগরী মেজর জেনারেল মঞ্জুরের অনুগত বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায়ই সেখানে কয়েক জায়গায় মরহুম প্রেসিডেন্টের নামাজে জানাজা হয়েছে। নামাজের কাতারে দাঁড়িয়েছেন হাজার হাজার চট্টগ্রামবাসী। বৃষ্টি-কাদা এবং সর্বোপরি টহলদানরত মঞ্জুরের বাহিনীর শ্যেন দৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও যে সাহসিকতার সঙ্গে সেদিন চট্টগ্রামবাসী তাদের নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তা রীতিমত অভাবিত।... সাধারণ মানুষ কেঁদেছে, বুক চাপড়িয়েছে এবং উতরোল অশ্রু সাগরে ভেসেছে।’ [সচিত্র স্বদেশ, ২৫ জুন, ১৯৮১]।
নন্দিত কথাশিল্পী মরহুম হুমায়ূন আহমেদ বলতেন, আওয়ামী লীগের লোকজন অনুকূল
বাতাসে বীর হয়ে ওঠে আর প্রতিকূল বাতাসে গা ঢাকা দেয়। তো এখনকার অনুকূল
বাতাসে পাল খাটিয়ে আওয়ামী লীগের ‘কচিকাঁচার আসরের’ নেতাকর্মীরা যাই বলুন না
কেন, তাদের নৌকায় চেপে গাঙ পার হওয়ার জন্য গৃহপালিত বুদ্ধিজীবীরা যাই বলুন
না কেন, সেদিন শহীদ জিয়ার জন্য বাংলাদেশ কেঁদেছিল বুক চাপড়িয়ে। বাংলাদেশের
মানুষের সঙ্গে কেঁদেছিল বিশ্বজনতা ও বিশ্বনেতারা।
জিয়াউর রহমানের মিত্র এবং শত্রুদের জন্য তারই কিছু নমুনা এখন তুলে দিচ্ছি।
এর মাধ্যমে হয়তো জিয়া অনুসারীদের হীনম্মন্যতা কিছুটা কমবে। আর শত্রুদের মুখেও ঘষে দেয়া যাবে ঝামা। হয়তো ফিরবে তাদের কাণ্ডজ্ঞান। হয়তো ফিরবে না। তারপরও শাসক দল সৃষ্ট অশ্রদ্ধার তাণ্ডব ও কুজ্ঝটিকা যদি কিছুমাত্র কমে, জাতি স্বস্তি পাবে। তবে ধরে নেয়া যায় সে আশার গুড়ে বালি। তবুও আশায় বসতি।
জিয়ার শাহাদাতের পর সারা পৃথিবী থেকে আসতে থাকে স্তূপ স্তূপ শোক বার্তা। বিশ্বের বিভিন্ন নগরীতে বের হয় শোক র্যালি। তারই কিঞ্চিত নতিজা এখানে পেশ করছি।
ওয়াশিংটন : প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট রিগান বলেন, তিনি অত্যন্ত শোকাহত এবং গভীরভাবে দুঃখিত। নিজ জনগণের উন্নত জীবনযাপনের জন্য তিনি ছিলেন আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। সুগভীর সহানুভূতি থেকে উত্থিত এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি। আন্তর্জাতিক বিষয়ে তার জ্ঞান নাড়া দিয়েছে বিশ্ব বিবেবকে। পররাষ্ট্র বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা আশা করি প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিপন্ন হবে না।
ইন্দিরা গান্ধী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি জিয়াকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জিয়াউল হক
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়ার অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণ একজন মহান নেতা ও রাষ্ট্রনায়ককে হারাল। বার্তায় তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মর্যাদা অভাবিতভাবে বৃদ্ধি করেছেন।
ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র এ ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক ও অসময়োচিত বলে উল্লেখ করেন। মুখপাত্র বলেন, এ মৃত্যু সংবাদে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত।
কুয়েত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হক আরবে অবস্থানকালে কুয়েতের আমির শেখ জাবের আল আহমদ আল সাবাহ্র কাছে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি ব্যক্তিগত বার্তা নিয়ে যান। কিন্তু গত শনিবার তিনি যখন বার্তা হস্তান্তরের জন্য আমিরের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন তখন প্রেসিডেন্ট জিয়া আর জীবিত ছিলেন না। আমির অশ্রুসিক্ত নয়নে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। ক্যাবিনেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আবদুল আজিজ হোসেন বলেন, মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়া ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে ইসলামী শান্তিমিশনে যে মহত্ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তা কুয়েত সব সময় স্মরণ রাখবে। তিনি তার দেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা পুনরুল্লেখ করে বলেন, কুয়েত সব ধরনের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে।
ক্যারিংটন
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ক্যারিংটন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
জাপান
জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যার ঘটনায় তারা বিস্মিত। কারণ বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা তাদের জানা নেই।
পশ্চিম জার্মানি
পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিট ও অন্য নেতারা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন।
বার্তায় মি. স্মিট এ ঘটনাকে বাংলাদেশের জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি বলে অভিহিত করেছেন।
পশ্চিম জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন্স ডাইট্রিস প্রেন্সার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি শোকবার্তায় মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রশংসা করেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রেজনেভ
সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডে আন্তরিক শোক জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সহচরদের কাছেও গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে বাণী প্রেরণ করেন।
বাদশাহ খালেদ
সৌদি আরবের বাদশাহ খালেদ বিন আবদুল আজিজ অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের কাছে প্রেরিত এক তারবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু বাংলাদেশের নয়, মুসলিম উম্মাহর জন্য তার এ নির্মম মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে থাকবে।
সৌদি সরকার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নৃশংস হত্যার তীব্র নিন্দা করে।
রাণী এলিজাবেথ
ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ নিজের ও তার স্বামীর পক্ষ থেকে প্রেরিত এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়ার সেবা কমনওয়েলথ সদস্য রাষ্ট্রগুলো দ্বারা স্বীকৃত।’
চীন
চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাও জিয়াং ও চীনা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান মার্শাল জি রিয়ান ইয়াং প্রেরিত এক শোকবার্তায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য’ নিহত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাও জিয়াং এ সপ্তাহের নির্দিষ্ট সফরে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং এই মহান নেতার অক্লান্ত পরিশ্রম ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার পেছনে অবদান, জাতীয় মর্যাদা এবং ইসলামী বিশ্বের করণার্থে তার পরিশ্রমের প্রশংসা করেন।
সম্রাট হিরোহিতো জাপানের সম্রাট হিরোহিতো এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
কুর্ট ওয়াল্ড হেইম
জাতিসংঘ মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ড হেইম এক শোকবার্তায় বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সংবাদে তিনি আতঙ্কিত ও দুঃখিত হয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে তার আলোচনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ একজন বিজ্ঞ শাসনকর্তাকে হারাল, বিশ্ব হারাল একজন প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ককে।
বাদশাহ হোসেন
জর্ডানের বাদশাহ হোসেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ওপর বর্বেরোচিত হামলার নিন্দা করেছেন।
রাজা বীরেন্দ্র
নেপালের রাজা বীরেন্দ্র নেপালের ‘একজন মহান বন্ধু’ ও ‘আন্তর্জাতিক সমঝোতার অগ্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের’ হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সুহার্তো
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তো প্রেরিত এক বার্তায় বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যার সংবাদে তিনি খুবই মর্মাহত হয়েছেন।
কাতার
কাতারের আমির প্রেরিত এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে জঘন্য অপরাধ বলে বর্ণনা করেন এবং মরহুম প্রেসিডেন্টের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আফ্রো-এশীয় আইন উপদেষ্টা কমিটি
কলম্বোতে আফ্রো-এশীয় আইন উপদেষ্টা কমিটির ২২তম অধিবেশনে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের রাজা বোদুইন রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
সেনেগাল
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট আবদুল দিওফ পাঠানো এক শোকবার্তায় বলেন, ‘মানবজাতির সেবায় রাষ্ট্রপতি জিয়া ছিলেন উত্সর্গীকৃত প্রাণ।’
তিউনিসিয়া
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট হাবিব বরগুইবা তার পাঠানো শোকবার্তায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এ ধরনের হত্যার তীব্র নিন্দা করেন।
ভারত
ভারতের প্রেসিডেন্ট শ্রী নীলম সঞ্জিব রেড্ডি প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকাণ্ডে গভীর দুঃখ ও মর্মবেদনা প্রকাশ করেন। পাঠানো বার্তায় তিনি পড়শি বাংলাদেশের জনগণের এ শোকের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
বাহরাইন
বাহরাইনের আমির ইসা বিন সোলেমান আল খলিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে আন্তরিক দুঃখ ও বেদনা জানিয়ে এক শোকবার্তা পাঠান।
রুমানিয়া
রুমানিয়ার প্রেসিডেন্ট মি. নিকোলাই চসেস্কু বলেন, রুমানিয়ার জনগণের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপ্রধান জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
যুগোশ্লাভিয়া
যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট তারবার্তায় রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুতে দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার অবদানের প্রশংসা করেন।
স্লাইডার
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টি স্লাইডার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্দেশে শোক শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে আজ গভীর শোক। গভীর বিষাদের দিন। বাংলাদেশ তার এক মহান নেতাকে হারিয়েছে। বিশ্বও হারিয়েছে এক মহান নেতাকে। শান্তির জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য তার অবদান অপূর্ব।
এসব ছাড়াও মরহুম প্রেসিডেন্টের এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক হোসেন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট শ্রী জয়বর্ধন ও প্রধানমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী মি. সিওসাগর রামগুলাম, উত্তর কোরিয়া-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি ও কানাডার গভর্নর জেনারেল মি. এডওয়ার্ড স্কারিয়ার এবং ৩৮টি মুসলিম দেশ।
শোক বইয়ে স্বাক্ষর
মরহুম প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য চীনা দূতাবাস থেকে প্রদত্ত একটি পুষ্পস্তবক ‘শোক বইয়ের’ পার্শ্ববর্তী একটি স্ট্যান্ডে রাখা হয়।
কূটনৈতিক কোরের ডিন রুমানিয়ার রাষ্ট্রদূত মি. যোশেফ চিভু ‘গভীর শোক ও দারুণ বেদনা’সহ সর্বপ্রথম ‘শোক বইয়ে’ তার শোক লিপিবদ্ধ করেন।
তারপর ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, যুগোশ্লাভিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ভুটান, যুক্তরাজ্য, বুলগেরিয়া, চীন, পশ্চিম জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ড, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, বার্মা, পিএলও এবং ফ্রান্সের মিশন প্রধানরা শোক বইয়ে তাদের শোক লিপিবদ্ধ করেন।
জিয়াউর রহমানের মিত্র এবং শত্রুদের জন্য তারই কিছু নমুনা এখন তুলে দিচ্ছি।
এর মাধ্যমে হয়তো জিয়া অনুসারীদের হীনম্মন্যতা কিছুটা কমবে। আর শত্রুদের মুখেও ঘষে দেয়া যাবে ঝামা। হয়তো ফিরবে তাদের কাণ্ডজ্ঞান। হয়তো ফিরবে না। তারপরও শাসক দল সৃষ্ট অশ্রদ্ধার তাণ্ডব ও কুজ্ঝটিকা যদি কিছুমাত্র কমে, জাতি স্বস্তি পাবে। তবে ধরে নেয়া যায় সে আশার গুড়ে বালি। তবুও আশায় বসতি।
জিয়ার শাহাদাতের পর সারা পৃথিবী থেকে আসতে থাকে স্তূপ স্তূপ শোক বার্তা। বিশ্বের বিভিন্ন নগরীতে বের হয় শোক র্যালি। তারই কিঞ্চিত নতিজা এখানে পেশ করছি।
ওয়াশিংটন : প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট রিগান বলেন, তিনি অত্যন্ত শোকাহত এবং গভীরভাবে দুঃখিত। নিজ জনগণের উন্নত জীবনযাপনের জন্য তিনি ছিলেন আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। সুগভীর সহানুভূতি থেকে উত্থিত এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি। আন্তর্জাতিক বিষয়ে তার জ্ঞান নাড়া দিয়েছে বিশ্ব বিবেবকে। পররাষ্ট্র বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা আশা করি প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিপন্ন হবে না।
ইন্দিরা গান্ধী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি জিয়াকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জিয়াউল হক
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়ার অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণ একজন মহান নেতা ও রাষ্ট্রনায়ককে হারাল। বার্তায় তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মর্যাদা অভাবিতভাবে বৃদ্ধি করেছেন।
ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র এ ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক ও অসময়োচিত বলে উল্লেখ করেন। মুখপাত্র বলেন, এ মৃত্যু সংবাদে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত।
কুয়েত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হক আরবে অবস্থানকালে কুয়েতের আমির শেখ জাবের আল আহমদ আল সাবাহ্র কাছে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি ব্যক্তিগত বার্তা নিয়ে যান। কিন্তু গত শনিবার তিনি যখন বার্তা হস্তান্তরের জন্য আমিরের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন তখন প্রেসিডেন্ট জিয়া আর জীবিত ছিলেন না। আমির অশ্রুসিক্ত নয়নে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। ক্যাবিনেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আবদুল আজিজ হোসেন বলেন, মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়া ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে ইসলামী শান্তিমিশনে যে মহত্ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তা কুয়েত সব সময় স্মরণ রাখবে। তিনি তার দেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা পুনরুল্লেখ করে বলেন, কুয়েত সব ধরনের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে।
ক্যারিংটন
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ক্যারিংটন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
জাপান
জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যার ঘটনায় তারা বিস্মিত। কারণ বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা তাদের জানা নেই।
পশ্চিম জার্মানি
পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিট ও অন্য নেতারা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন।
বার্তায় মি. স্মিট এ ঘটনাকে বাংলাদেশের জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি বলে অভিহিত করেছেন।
পশ্চিম জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন্স ডাইট্রিস প্রেন্সার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি শোকবার্তায় মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রশংসা করেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রেজনেভ
সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডে আন্তরিক শোক জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সহচরদের কাছেও গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে বাণী প্রেরণ করেন।
বাদশাহ খালেদ
সৌদি আরবের বাদশাহ খালেদ বিন আবদুল আজিজ অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের কাছে প্রেরিত এক তারবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু বাংলাদেশের নয়, মুসলিম উম্মাহর জন্য তার এ নির্মম মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে থাকবে।
সৌদি সরকার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নৃশংস হত্যার তীব্র নিন্দা করে।
রাণী এলিজাবেথ
ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ নিজের ও তার স্বামীর পক্ষ থেকে প্রেরিত এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়ার সেবা কমনওয়েলথ সদস্য রাষ্ট্রগুলো দ্বারা স্বীকৃত।’
চীন
চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাও জিয়াং ও চীনা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান মার্শাল জি রিয়ান ইয়াং প্রেরিত এক শোকবার্তায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য’ নিহত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাও জিয়াং এ সপ্তাহের নির্দিষ্ট সফরে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং এই মহান নেতার অক্লান্ত পরিশ্রম ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার পেছনে অবদান, জাতীয় মর্যাদা এবং ইসলামী বিশ্বের করণার্থে তার পরিশ্রমের প্রশংসা করেন।
সম্রাট হিরোহিতো জাপানের সম্রাট হিরোহিতো এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
কুর্ট ওয়াল্ড হেইম
জাতিসংঘ মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ড হেইম এক শোকবার্তায় বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সংবাদে তিনি আতঙ্কিত ও দুঃখিত হয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে তার আলোচনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ একজন বিজ্ঞ শাসনকর্তাকে হারাল, বিশ্ব হারাল একজন প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ককে।
বাদশাহ হোসেন
জর্ডানের বাদশাহ হোসেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ওপর বর্বেরোচিত হামলার নিন্দা করেছেন।
রাজা বীরেন্দ্র
নেপালের রাজা বীরেন্দ্র নেপালের ‘একজন মহান বন্ধু’ ও ‘আন্তর্জাতিক সমঝোতার অগ্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের’ হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সুহার্তো
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তো প্রেরিত এক বার্তায় বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যার সংবাদে তিনি খুবই মর্মাহত হয়েছেন।
কাতার
কাতারের আমির প্রেরিত এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে জঘন্য অপরাধ বলে বর্ণনা করেন এবং মরহুম প্রেসিডেন্টের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আফ্রো-এশীয় আইন উপদেষ্টা কমিটি
কলম্বোতে আফ্রো-এশীয় আইন উপদেষ্টা কমিটির ২২তম অধিবেশনে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের রাজা বোদুইন রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
সেনেগাল
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট আবদুল দিওফ পাঠানো এক শোকবার্তায় বলেন, ‘মানবজাতির সেবায় রাষ্ট্রপতি জিয়া ছিলেন উত্সর্গীকৃত প্রাণ।’
তিউনিসিয়া
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট হাবিব বরগুইবা তার পাঠানো শোকবার্তায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এ ধরনের হত্যার তীব্র নিন্দা করেন।
ভারত
ভারতের প্রেসিডেন্ট শ্রী নীলম সঞ্জিব রেড্ডি প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকাণ্ডে গভীর দুঃখ ও মর্মবেদনা প্রকাশ করেন। পাঠানো বার্তায় তিনি পড়শি বাংলাদেশের জনগণের এ শোকের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
বাহরাইন
বাহরাইনের আমির ইসা বিন সোলেমান আল খলিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে আন্তরিক দুঃখ ও বেদনা জানিয়ে এক শোকবার্তা পাঠান।
রুমানিয়া
রুমানিয়ার প্রেসিডেন্ট মি. নিকোলাই চসেস্কু বলেন, রুমানিয়ার জনগণের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপ্রধান জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
যুগোশ্লাভিয়া
যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট তারবার্তায় রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুতে দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার অবদানের প্রশংসা করেন।
স্লাইডার
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টি স্লাইডার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্দেশে শোক শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে আজ গভীর শোক। গভীর বিষাদের দিন। বাংলাদেশ তার এক মহান নেতাকে হারিয়েছে। বিশ্বও হারিয়েছে এক মহান নেতাকে। শান্তির জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য তার অবদান অপূর্ব।
এসব ছাড়াও মরহুম প্রেসিডেন্টের এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক হোসেন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট শ্রী জয়বর্ধন ও প্রধানমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী মি. সিওসাগর রামগুলাম, উত্তর কোরিয়া-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি ও কানাডার গভর্নর জেনারেল মি. এডওয়ার্ড স্কারিয়ার এবং ৩৮টি মুসলিম দেশ।
শোক বইয়ে স্বাক্ষর
মরহুম প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য চীনা দূতাবাস থেকে প্রদত্ত একটি পুষ্পস্তবক ‘শোক বইয়ের’ পার্শ্ববর্তী একটি স্ট্যান্ডে রাখা হয়।
কূটনৈতিক কোরের ডিন রুমানিয়ার রাষ্ট্রদূত মি. যোশেফ চিভু ‘গভীর শোক ও দারুণ বেদনা’সহ সর্বপ্রথম ‘শোক বইয়ে’ তার শোক লিপিবদ্ধ করেন।
তারপর ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, যুগোশ্লাভিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ভুটান, যুক্তরাজ্য, বুলগেরিয়া, চীন, পশ্চিম জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ড, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, বার্মা, পিএলও এবং ফ্রান্সের মিশন প্রধানরা শোক বইয়ে তাদের শোক লিপিবদ্ধ করেন।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সেই সময়কার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবাদপত্রগুলোও
জিয়া হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছিল গভীর
শ্রদ্ধা। তার কিছু খতিয়ান তুলে ধরাও আমার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এই নিবন্ধের
আয়তনিক সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে তা থেকে বিরত রইলাম। আগামী সংখ্যায় সে
বিষয়ে আলোকপাত করার আশা রইল। মূর্খরা হয়তো এর থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে,
কিন্তু দেশপ্রেমিকরা পাবেন আলো। বুঝতে পারবেন জিয়া শুধু দেশের নেতাই নন,
পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বনেতায়। এ কথায় গায়ে জ্বালা ধরার কিছু নেই, শেখার আছে
অনেক কিছু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন